নাগরিক সনদ
১। ১৮ থেকে ৩০ বছরের নাগরিক সংশ্লিষ্ট এলাকায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য/সদস্যা হতে পারবেন।
২। ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার/ ভিডিপি ইউনিয়ন দলনেতা ও দলনেত্রীর মাধ্যমে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা লোক বাছাই এবং সদস্য-সদস্যা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন।
৩। আনসার বাহিনীর সদস্য হলে সম্পূর্ণ সরকারী খরচে (থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, পোশাকাদি) ৪৯ দিন মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ লাভ করতে পাবেন। প্রশিক্ষণের পর সাধারণ আনসার হিসেবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং অঙ্গীভূত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।
৪। প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী সদস্য-সদস্যা বাছাই করে জেলা কার্যালয়ে তালিকা প্রেরণ করবেন। প্রশিক্ষণার্থীদের বয়স ১৮ হতে ৩০ বছর, শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী, উচ্চতা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট। বুকের মাপ পুরুষদের ৩০ ইঞ্চি থেকে ৩২ ইঞ্চি এবং সবার দৃষ্টি শক্তি ৬/৬ হতে হবে।
৫। গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্য-সদস্যাগণকে সর্ম্পূণ সরকারী খরচে গ্রামেই ১০ দিন মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এতে গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের পরিচিতি ও কার্যক্রম এবং সদস্য-সদস্যাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিষয় শেখানো হয়। বাহিনীর উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। ১০ দিনের প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ৯০/- টাকা দৈনিক ভাতা হিসেবে দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ সনদ প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণ সদস্য-সদস্যাদের সার্বিক উন্নয়নের পথ প্রদর্শন করে।
৬। বাহিনীর সদস্য-সদস্যাদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পেশায় সম্পূর্ণ সরকারী খরচে (থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, প্রশিক্ষণ খরচ, উপকরণ ব্যয়সহ) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পেশাগুলোর মধ্যে- (১) মৎস্য চাষ (২) ছাগল পালন (৩) উন্নত প্রযুক্তিতে আলু চাষ (৪) গবাদিপশু পালন (ক) দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন ও পালন (৫) হাঁস-মুরগী চিকিৎসা ও পালন (৬) অমৌসুমী সবজি চাষ (৭) আধুনিক পদ্ধতিতে ফল চাষ (৮) উন্নত মানের আম চারা উৎপাদন (৯) উন্নত প্রযুক্তিতে নার্সারীকরণ (১০) মাশরুম চাষ (১১) ড্রাইভিং (১২) ফ্রিজ এয়ারকন্ডিশনার মেরামত (১৩) ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ (১৪) সেলাই (১৫) নকশী কাঁথাবুনন ও (১৬) কম্পিউটার বেসিক কোর্স উল্লেখযোগ্য।
প্রশিক্ষণের পর আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক বা স্থানীয় কোন ব্যাংক বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে সুবিধা হয়।
৭। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান/সংস্থা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনে অস্ত্রসহ অথবা অস্ত্রবিহীন আনসার অঙ্গীভূত করতে পারেন। এজন্য তাদের জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার ভিডিপির অনুকূলে অনুরোধপত্র দাখিল করতে হবে। বিভাগীয় কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীর থেকে সন্তোষজনক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার অঙ্গীভূত করে দেবেন। এসব আনসারদের সরকার নির্ধারিত হারে বেতন ভাতা, দৈনিক ভাতার ১০% হারে আনুষঙ্গিক খরচ এবং ঈদ বোনাসের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সংস্থাকে বহন করতে হবে। ৩ মাসের বেতন ভাতার অর্থ অগ্রিম দিতে হবে।
৮। অঙ্গীভূত হতে প্রত্যাশি আনসারদের ফায়ারিং অভিজ্ঞতাসহ মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হবে। বয়স ১৮ থেকে ৫০, উচ্চতা ন্যূনতম পুরুষ ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও মহিলাদের ৫ ফুট এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী হতে হবে। তারা এক নাগাড়ে ৩ বছরের জন্য অঙ্গীভূত হবে।
প্রত্যাশী আনসারদের মধ্য থেকে প্রয়োজন ও যোগ্যতা যাচাই করে জেলা কমান্ড্যান্ট প্যানেল তৈরী করবেন এবং প্যানেল থেকে আনসার অঙ্গীভূত করবেন। প্যানেল ও অঙ্গীভূত হওয়ার জন্য এসব আনসারদের সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ, সন্তোষজনক পুলিশ প্রতিবেদন এবং পাসপোর্ট ও স্ট্যাম্প সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।
বর্তমান হারে একজন পিসি/এপিসি দৈনিক ১৯২.৬১ টাকা হারে ৩০ দিনে ৫,৭৭৮.৩০ টাকা, একজন আনসার দৈনিক ১৮০.০০ টাকা হারে ৩০ দিনে ৫,৪০০.০০ টাকা বেতন ভাতা প্রাপ্য হবেন। এছাড়া পিসি/এপিসি ৪,৩০৪.১০ টাকা হারে বছরে ২টি এবং আনসার ৩,৯২৫.৮০ টাকা হারে ২টি উৎসব ভাতা প্রাপ্য হবেন। তারা সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে মাসে ২৮ কেজি চাউল, ২৮ কেজি গম এবং ২ লিটার ভোজ্য তেল প্রাপ্য হবেন। এছাড়া ইউনিফর্ম সামগ্রী সরকারী খরচে পাবেন।
৯। আনসার ভিডিপির সদস্য-সদস্যাগণ কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে বা পঙ্গু হয়ে গেলে কল্যাণ তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবার/ব্যক্তি এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা এবং চিকিৎসার ব্যয় প্রাপ্য হবেন। ব্যাটালিয়ন আনসারগণ যৌথ বীমার সুবিধা প্রাপ্য হবেন। বাহিনীর সফল সদস্য/সদস্যা প্রশংসনীয় ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদক অথবা পুরষ্কার পাবেন।
১০। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী ও আধাসরকারী চাকরির ক্ষেত্রে এ বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য/সদস্যাদের জন্য ১০% আসন সংরক্ষিত রয়েছে।
১১। বাহিনীর কর্মতৎপরতা জোরদার করতে এবং সদস্য/সদস্যাদের উন্নয়নের জন্য গ্রামে ক্লাব-সমিতি গঠন করা হয় এবং আর্থিক সহায়তা ও সামগ্রী প্রদান করা হয়ে থাকে।
১২। যে কোন ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ/এলাকাবাসী স্বেচ্ছাসেবী বা অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য/সদস্যাদের কাজে নিয়োজিত করতে চাইলে বা তাদের কোনরূপ সহায়তা চাইলে উপজেলা/থানা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা অথবা জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার ভিডিপি-র সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং সরকারী সুশৃংখল এ বাহিনীর সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
প্রশিক্ষণ নিয়মাবলী
১। গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণ (ভিডিপি, পুরুষ ও মহিলা)
এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের সদস্য/ সদস্যাগণ ভিডিপি সংগঠন সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন এবং ভিডিপি প্লাটুনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন। প্রশিক্ষণের নিয়মাবলী নিম্নরুপঃ
১। সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ (পুরুষ ও মহিলা)
এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে সদস্য/সদস্যাগণ সাধারণ আনসার হিসাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয় এবং অঙ্গীভূত হওয়ার যোগ্যতা করেন। এই প্রশিক্ষণের নিয়মাবলী নিম্নরুপঃ
(ক) বয়স ১৮ হতে ৩০ বছর
(খ) শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যুনতম অষ্টম শ্রেনী পাশ। তবে এসএসসি বা তদূর্দ্ধ পাশদের প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রাধিকার দেয়া হয়।
(গ) উচ্চতাঃ
(অ) সর্বনিম্ন ১৬০ সেঃ মিঃ অর্থাৎ ৫র্-৪র্ (পুরুষের ক্ষেত্রে)
(আ) সর্বনিম্ন ১৫০ সেঃ মিঃ অর্থাৎ ৫র্-০র্ (মহিলার ক্ষেত্রে)
(ই) বুকের মাপ ৭৫ সেঃ মিঃ হতে ৮০ সেঃ মিঃ অর্থাৎ ৩০র্-৩২র্ (পুরুষের ক্ষেত্রে)
(ঈ) দৃষ্টি শক্তিঃ ৬/৬
১। পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ
মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন আনসার-ভিডিপি সদস্য/সদস্যা স্বনির্ভর হবার সুযোগ পায়। আনসার-ভিডিপি সংগঠন প্রতি বছর বিভিন্ন ধরণের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যেমনঃ-
সাধারণ আনসার অঙ্গীভূতির নিয়মাবলী
৪। আনসার সদস্যের জন্য
যে কোন সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান/ সংস্থায় চাহিদা বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আনসার অঙ্গীভূত করে দায়িত্বে নিয়োগ করা হয়।
(ক) বয়স ১৮ হতে ৪০ বছর
(খ) শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেনী পাশ, তদূর্দ্ধদের প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রাধিকার দেয়া হয়।
(গ) উচ্চতাঃ ৫র্-৪র্ (পুরুষ), ৫র্-২র্ (মহিলা) (অধিক উচ্চতা সম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
(ঘ) বৈবাহিক অবস্থাঃ বিবাহিত/অবিবাহিত উভয়ই।
(ঙ) ইউনিয়ন চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক ও নাগরিকত্ব সনদ পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের সত্যায়িত কপি, সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের সনদপত্র, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ও জেলা কমান্ড্যান্ট কর্তৃক প্রদত্ত অনাপত্তি পত্র (অন্য জেলার প্রার্থীর জন্য প্রযোজ্য), ০৬ কপি পাসপোর্ট ও ০৩ কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
১। নিরাপত্তা সেবা প্রত্যাশী সংস্থার জন্য।
নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে যে কোন প্রত্যাশী সংস্থা আনসার অঙ্গীভূত করতে পারেন।
অঙ্গীভূতির মেয়াদকালঃ প্রত্যাশী সংস্থা কমপক্ষে তিন মাসের জন্য আনসার নিয়োগ করবেন। সশস্ত্র হলে কমপক্ষে ১০ জন এবং নিরস্ত্র হলে ৬ জন আনসার অঙ্গীভূত করা হয়।